প্রাচীন চারঘাটের ঘাট সমূহ



নিরিবিলি
ব্লগ লিখেছেন: মো: আরিফুল ইসলাম অভি
Charghat Students' Welfare Association

প্রায় ৫০০-৬০০ বছর পূর্বে পদ্মা আরো প্রায় ১০ কিমলোমিটার পশ্চিমে প্রবাহিত হত। রাজশাহীর পাশ দিয়ে বয়ে যেত মহানন্দা নদ। সারদার কাছে এসে পদ্মা আর মহানন্দার মিলন ঘটে। মিলিত ধারা পদ্মা নাম নিয়ে বড়ালের প্রবাহ পথে প্রবাহিত হতে থাকে। পদ্মা-মহানন্দার কাছে গড়ে উঠেছিল ছয়টি ঘাট। এর মধ্যে স্টীমার ঘাট, থানা ঘাট, ঠাকুর বাড়ির  ঘাট ও বাবুলালের ঘাটের নামে চারঘাট নাম করণ করা হয়। 
স্টীমার ঘাটঃ
চারঘাট বাজার থেকে প্রায ৩ কিলোমিটার দূরে চন্দন শহরে স্টীমার ঘাট ছিল। মূল চন্দন শহরের বেশির ভাগ অংশ নদীর গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। এই ঘাটে বড় বড় স্টীমারে করে পাট সহ অনান্য মালামাল আনা নেওয়া হত। মানুষও যাতায়াত করত এই পথ ধরে। জৈনক ব্রাহ্মণের নামে এই ঘাটের নাম করণ করা হয়। পূর্বে এই স্থান দিয়ে ‘চনন্দনা’ নামের পদ্মার একটি শাখা নদী বের হয়েছিল। পূর্বে চন্দন শহরে ব্রহ্মণ শ্রেনীর লোকের বাস ছিল। স্টীমার ঘাটের টিকেট মাস্টার ছিলেন জগন্নাথ নামক এক ব্রহ্মণ। সারদার হেমন্তর মোড়ে হেমন্ত বাবুর যে পরিত্যক্ত সম্পত্তি দেখা যায় সেগুলা সব জগন্নাথ বাবুর সম্পত্তি। বর্তমানে স্টীমার ঘাটের কোন অস্তিত্ব নাই।

থানা ঘাটঃ বর্তমানে যেখানে চারঘাট থানার অবস্থান ঠিক তার পেছনেই ছিল থানা ঘাট। অন্যান্য কাজের সাথে এই ঘাট থানার কাজে ব্যবহার করা হত। বর্তমানে এই ঘাটের কোন অস্তিত্ব নাই।

ঠাকুর বাড়ির ঘাটঃ
চারঘাটের মাড়োযারী সম্প্রদায়ের রোক এই ঘাট ব্যবহার করত। এখানে আছে মাড়োয়ারীদের শতাব্দী প্রচিন নিজস্ব শিব মন্দির। ঘাট সংরগ্ন এলাকায় একটি বট বৃক্ষ আছে। বর্তমানে ঘাটটি আর আগের অবস্থানে নাই। এই শিব মন্দিরে মাড়োয়ারী সম্প্রদায়ের লোকেরা পূজা অর্চনা করত। বর্তমানে ঠাকুর বাড়ির কর্তা ভারতে থাকেন। মাঘে মাঘে এসে নিজ আলয়ের খোঁজ নেন।
বাবুলালের ঘাটঃ
ঠাকুর বাড়ির ঘাট থেকে ৫০০ গজ পূর্বে দূর্গা মন্দিরের উত্তর দিকে, বড়াল পাড়ে এই ঘাটের অবস্থান। বর্তমানে সেখানে পৌরসভার ড্রেন বহমান। বাবুলাল নামের এক ব্যবসায়ীর নামে ঘাটের নাম করণ করা হয়। এই ঘাটে বাবুলাল আর তাঁর শরীকেরা পুঁজা শেষে প্রতিমা বিসর্জন দিত।
খেয়া ঘাটঃ
 বর্তমানে যেখানে বড়াল ব্রিজ আছে, ঠিক তার সেখানেই ছির খেয়া ঘাট। এই ঘাট দিয়ে সবাই নদী পার হত। তখন সারি সারি নৌকা পাড়ে বাধাঁ থাকত। ব্রিজ হবার পর থেকে এই ঘাটটি বন্ধ হয়ে যায়।
বেদের ঘাটঃ
 বড়াল ব্রিজের পূর্বে এই ঘাটের অবস্থান ছিল। ফি বছর নাটোরের সিংড়া থেকে বেদের দল এখানে এসে অস্থায়ী তাবুতে অবস্থান করত। ২০ বছর পূর্বেও তারা বর্ষকালে এখানে এসে অবস্থান করত। সাপের নাচ দেখিয়ে এরা সবাইকে আনন্দ দিত। মাঝে মাঝে তারা চুরি সহ কিছু অপরাধ কর্মে লিপ্ত হত।



                                                                        ডিজাইনারঃ অভি




ছবিঃ শফিউর রহমান বাপ্পী

কৃতজ্ঞতা প্রকাশঃ ঐতিহ্যের চারঘাট- ডাঃ মোঃ আব্দুল মালেক
আরো দেখুন:


মন্তব্যসমূহ

  1. অপূর্ব ভাই...খুব সুন্দর উপস্থাপনা।

    উত্তরমুছুন
  2. লিখাটি আর ছবিটা এক কথায় অসাধারণ

    উত্তরমুছুন
  3. এই মন্তব্যটি লেখক দ্বারা সরানো হয়েছে।

    উত্তরমুছুন
  4. বহুদিন যাবত চারঘাটের ইতিহাস খুজছিলাম । আজ পেলাম । যাহক রেফেরেন্স উল্লেখ করলে আরও অনেক সুন্দর হত বোধহয় । আর শফিউর রহমান বাপ্পী কে ধন্যবাদ তার এরকম excellent অঙ্কনের জন্য।

    উত্তরমুছুন
  5. কি বা কার রেফারেন্স দিব? এই কাজ, কল্পিত ছবি সবই আমার মৌলিক কাজ। আর একটা প্রন্থ থেকে কিছু ইনফরমেশন পেয়েছিলাম সেটা উল্লেখ করা আছে। #Md_Mohiuddin

    উত্তরমুছুন
  6. আপনাদের সাথে আলাপ করতে চাই যোগাযোগের উপায় কি\

    উত্তরমুছুন
  7. অনেক সুন্দর উপস্থাপনা... মোঃ শফিউর রহমান বাপ্পি কে অসংখ্য ধন্যবাদ ❤️❤️ খুব সুন্দর কল্পনা।

    উত্তরমুছুন

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

চারঘাটের নদ-নদী, ১ম পর্বঃ গঙ্গা/পদ্মা নদী (Ganges/Padma River)

বাংলাদেশ পুলিশ একাডেমী/একাডেমি, সারদা (Bangladesh Police Academy)

সরদহ সরকারী/সরকারি পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় (Sardah Govt. Pilot High School)