চারঘাটের নদ-নদী, ৪র্থ পর্বঃ বড়াল নদ/ বড়াল নদী (Baral River)


উৎস মুখে বড়াল
চারঘাট



উৎসঃ গঙ্গা (পদ্মা) নদী
মোহনাঃ যমুনা নদী
চারঘাটের সবচেয়ে জীবন ঘনিষ্ঠ নদীর নাম হল বড়াল। বড়াল নামটি এসছে ‘বড় হর’ কিংবা ‘বড় হাওর’ থেকে। পদ্মার বড় নদী বলেই সবাই বড়ালকে এই নামে ডাকত। অবশ্য কয়েকশত বছর পূর্বে পদ্মার মূল স্রোত বড়াল দিয়ে প্রবাহিত হত বলে প্রমাণ মিলেছে। ১৬৬০ সালের ভান ডেন ব্রুকের ম্যাপ থেকে দেখা যায় যে, সরদহের নিকট গঙ্গা ও মহানন্দা চূড়ান্তভাবে মিলিত হয়েছে। এরপর মিলিত ধারা দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে একটি দক্ষিণ-পশ্চিম দিকে অগ্রসর হচ্ছে। বাঘার দিকে অগ্রসরমান এই নদীকে পদ্মা বলা হত। আর আরেকটি ধারা পূর্ব দিকে অগ্রসর হতে থাকে। বিশাল এই জলধারা তখনকার দিনে ‘গঙ্গা’ নামে চলন বিলের মধ্য দিয়ে ‘ধলেশ্বরী’ ও ‘বুড়িগঙ্গা’ খাত দিয়ে ঢাকার দিকে অগ্রসর হতে থাকে। পরে এটি চট্টগ্রামের কাছে গিয়ে ‘ব্রহ্মপুত্রের’  সাথে মিশে বঙ্গপোসাগরে পতিত হত। বর্তমান নরসিংদী জেলায়  অবস্থিত ব্রহ্মপুত্র ও মেঘনার মিলিত ধারার সাথে মূলত বড়াল মিলিত হত। এটিই আমাদের আলোচ্য ‘বড়াল’ নদ। পরে গঙ্গার দিক পরিবর্নের ফলে এই ধারাটি ক্রমশ ছোট হতে থাকে এবং তখন থেকেই চলন বিলের সৃষ্টি হতে থাকে। বড়ালের মৃত খাত গুলি বড় বড় হাওরের (বিল) আকার ধারণ করে। তখন লোকে এটিকে
পদ্মা থেকে জন্ম নিচ্ছে বড়াল
থানাপাড়া, চারঘাট
 গঙ্গার পরিবর্তে ‘গঙ্গার বড় হাওর’ বলতে থাকে। এই ‘বড় হাওর’ থেকে ‘বড় হর’; আর সেখান থেকেই ‘বড়াল’ নামের উৎপত্তি। বড়াল ঢাকাগামী খাত পরিবর্তন করে জাফরগঞ্জের নিকট মূল পদ্মা/গঙ্গায় মিলিত হলে বড়ালের মৃত খাত গুলি ‘ধলেশ্বরী’ ও ‘বুড়িগঙ্গা’ নদী নামে পরিচিতি লাভ করে। ( গঙ্গা, পদ্মা, বড়াল, বুড়িগঙ্গা, ধলেশ্বরী ও চলন বিল নিয়ে পরে আরেকটি ব্লগে বিস্তারিত দেওয়া হবে।)
ছবিতে পদ্মা থেকে বড়ালের উৎস মুখ।
বড়ালের গতিপথঃ
বড়াল পদ্মার বাম তীরের প্রধান শাখা নদী। এটি চলনবিলের অন্যতম নদী। আত্রইয়ের পরেই বড়ালের স্থান। চলন বিলের পলি নিষ্কাশনের জন্য বড়াল বিখ্যাত। এটি পদ্মা ও যমুনার সংযোগ রক্ষাকারী একমাত্র নদী। বড়ালের উৎস চারঘাটের থানাপাড়া-বাবুপাড়া সংলগ্ন গ্রামে। এখান থেকে বড়াল পদ্মা থেকে বের হয়ে প্রায় এক কিলোমিটার প্রবাহিত হয়ে চারঘাট বাজারের নিকট পৌছেছে। ১৯৮৪ সালের দিকে এখানে ৩৫ মিটারের একটি স্লুইচ গেট দিয়ে বড়ালের প্রবাহ মন্থর করে দেওয়া হয়েছে। এখান থেকে বড়াল পূর্ব মুখী হয়ে বেশ কিছু দূর অগ্রসর হয়েছে। নন্দনগাছীর নিকট একটা বড় বাঁক দিয়ে আড়ানীর দিকে চলে গেছে বড়াল। এরপর বাগাতিপাড়ার হাপানিয় নামক গ্রামে শাখা নদী মুসা খানের জন্ম দিয়ে দয়ারামপুরের দিকে প্রবাহিত হয়েছে। এখানে আরেকটি স্লুইচ গেট দিয়ে নদীকে শাসন করা হয়েছে। আটঘরিয়া নামক গ্রামে বড়াল তার প্রধান শাখা নদী নন্দকুজার জন্ম  দিয়ে লালপুরের আব্দুলপুর রেল স্টেশনের দিকে প্রবাহিত হযেছে। পরে ওয়ালিয়া বাজার হয়ে বড়াই গ্রাম অতিক্রম করে জোনাইল, সাঁতৈল অতিক্রম করে চাটমোহরের দিকে অতিক্রম করেছে। এরপর পাবনার ভাঙ্গুরা, ফরিদপুর হয়ে বড়াল সিরাজগঞ্জের বাঘাবাড়ীর দিকে চলে গেছে। এরপর নাকালিয়ার নিকট হুরাসাগর নদের সাথে মিশে প্রমত্তা যমুনাতে গিয়ে পড়েছে। আত্রাই, গুড়, গুমানী, করতোয়া ইত্যাদি বড়ালের প্রধান উপনদী। ফরিদপুরে গুমানী বড়ালের সাথে মিশে বড়াল নামে প্রবাহিত হতে থাকে। গুমানী মূলত গুড়, আত্রাই, নন্দকুজার মিলিত ধারা। বাঘাবাড়ি ব্রিজের নিকট গুমানীর শাখা নদী গোহালা বড়ালের সাথে এসে মিশেছে। এরপর বাঘাবাড়ী ব্রিজের দুই কিলোমিটার ভাটিতে করেতায়া এসে মিশেছে বড়ালের সাথে। মিলিত ধারা বড়াল নামে প্রবাহিত হয়ে ফুলঝোড় নদীর পানি বক্ষে ধারন করে পূর্বে অগ্রসর হতে থাকে। পরে হুরাসাগর এসে

বড়াল ব্রিজ, চারঘাট
বড়ালের সাথে মিশলে মিলিত ধারা হুরা সাগর নামি আরো ৭ কিলোমিটার পথ প্রবাহিত হয়ে পাবনার বেড়া উপজেলার  নাকালিয়ার নিকট যমুনাতে গিয়ে পড়ে। উল্লেখ্য হুরাসাগর এখন বড়ালের তুলনায় বেশ ছোট নদী। তবে পূর্বে বেশ বড় নদী ছিল বলে মিলিত ধারা হুরাসাগর নামে প্রবাহিত। বড়ালের মোট প্রবাহ পথ ২২০ কিলোমিটার। মুসা খান নদ, নন্দকুজা, ঝিনি,  চিকনাই, পঁচা বড়াল ইত্যাদি বড়ালের কয়েকটি শাখা নদী। বড়ালের পাশে মিল্ক ভিটা সমবায় সমিতি গড়ে উঠেছে। শুষ্ক মৌসূমে বড়ালের এই অংশে তৃণভূমি জেগে উঠে। কবি গুরু রবীন্দ্রনাথের রচনায় বড়ালের উল্লেখ পাওয়া যায়।
বড়াল স্লুইচ গেট, চারঘাট


চারঘাটের বড়াল নদঃ
প্রথমেই বলেছি বড়াল চারঘাটের সব থেকে জীবন ঘনিষ্ঠ নদী। বড়াল মিশে আছে আমাদের শিক্ষা ও সংস্কৃতির সঙ্গে। বড়াল চারঘাটকে দুই ভাগে ভাগ করে দিয়েছে। নদীর উত্তর পাশ সারদা আর দক্ষিণ পাশ চারঘাট নামে বেশি প্রসিদ্ধ। নদীর দুই পাশের জনপদের জীবন যাত্রাতেও আছে বৈচিত্র। উল্লেখ্য পদ্মা এই অঞ্চলের সর্ব বৃহৎ নদী। তবে পদ্মা চারঘাটের এক পাশ দিয়ে বয়ে চলেছে সাগর সঙ্গমে। কিন্তু তার পানি উজার করে দিযেছে তার বড় পুত্র বড়ালকে।  রাজশাহী অঞ্চলে পদ্মার পনি বড়াল আর নারদের মাধ্যেম প্রবাহিত হত। চারঘাটের অসংখ্য বিলের পানির যোগান দিয়ে আসছে বড়াল। বড়ালে পানি না থাকায় এখন থানাপাড়ার দহ, ঝিকরার বিল, বালিয়াডাঙ্গার বিল, পাতির বিল, বাটিকামারি বিল, সহ অন্যান্য বিলে পদ্মার পানি গড়াই না। আর ছোট মাছের ঝাঁক দেখা যায় না। চারঘাটে স্লুইচ গেটের কারণে নদীর পানি একন আর বিলে যাচ্ছে না। খাল সমূহ শুকেনো পরে আছে। পূর্বে শলয়ার দহ, ভেন্নার বিলে খালের মাধ্যমে পানি যেত্ কিন্তু স্লইচ গেটের কারণে আর পানি যাচ্ছে না। সচল বড়ালের ধার ঘেষে গড়ে উঠেছিল প্রাচীন নগর ‘নন্দনগাছী’। জোত কার্ত্তিকে বড়াল পাড়ে বসত উপমহাদেশের সবচেযে বড় পৌষ সংক্রান্তির মেলা। মেলা এখনো হয তবে আগের জৌলুস আর নাই। চারঘাটের বিখ্যাত কালু পীরের মেলা বড়াল পাড়ে বসছে। বড়ালে পানি না থাকায় ভূমি দস্যুরা জমি দকল করে নিচ্ছে। জেলেরা আর আগের মত মাছ পাচ্ছে না। অনেকেই পেশা পরিবর্তন করেছে। এখন আর বড়ালে শুশুকের দেখা মিলে না। চারঘাটের স্লইচ গেটে বর্ষা কালের কয়েরক মাস পদ্মা-বড়ালের টাটকা মাছ পাওয়া যায়। যখন পানি আসে তখন জেলেদের ব্যস্ততা বেড়ে যায়। প্রতিদিন অসংখ্য লোক সকাল বিকাল বড়ালের গর্জন শুনতে আসে। জাহাঙ্গীরাবাদ আর চাঁদ নগরের কাছে দুটি বৃহৎ বাঁক আছে।
বড়াল আমাদের রক্তের সাথে মিশে আছে। চারঘাটের বিখ্যাত সাংস্কৃতিক গোষ্ঠী পদ্মা-বড়াল থিয়েটার বড়ালের পাড় ঘেঁষে গড়ে উঠেছে। নন্দনগাছীর জোত কার্ত্তিকে বড়াল মহিলা কলেজ নামের একটি কলেজ আছে। অনুপমপুর ব্রিজ, মুংলি ব্রিজ, আড়ানীর ব্রিজ, কালুহাটির ব্রিজ ইত্যাদি চারঘাটের সৌন্দর্য আরো কয়েক গুন বাড়িয়ে দিয়েছে। কালুহাটিতে বড়ালের পাড়ে গড়ে উঠেছে বিপুল সম্ভাবনাময পাদুকা শিল্প। চারঘাটে বাড়ালের ‘ত্রিমহনী’ 'সিংগিমারি'  ও 'ঝিনি' নামক কয়েকটি শাখা নদীর কথা জানা যায়।
বড়ালের মৃত দশার কারণে চারঘাট এখন বিপর্যয়ের মুখে। নদতে পানি না থাকায় পানির স্তর ক্রমেই নিচে নেমে যাচ্ছে। ভূ-গর্ভস্থ পানির ওপর চাপ বেড়ে যাচ্ছে। স্থানীয়রা ফারাক্কা বাঁধের চেয়ে বড়ালের মৃত্যুর জন্য স্লুইচ গেটকেই বেশি দায়ী করে থাকেন। আসলে বড়াল পদ্মার উজানের নদী হওয়ার কারণে ফারাক্কার প্রভাব বড়ালে বেশি পড়ত না। স্লুইচ গেট দেওয়ার আগে বড়ালে পানি আসত ২১ হাজার কিউসেক। আর স্লুইচ গেট দেওয়ার সময় মাত্র ৫ হাজার কিউসেক পানি ডিসচার্জ করার ক্ষমতা সম্পন্ন তিনটি গেট দেওয়া হয়। বাস্তবতা হল মাত্র ৩ হাজার কিউসেক পানি এখন বড়ালে প্রবাহিত হচ্ছে।

শুষ্ক মৌসুমে বড়াল
চারঘাট স্লুইচ গেট

নন্দনগাছীতে শুষ্ক মৌসুমে ক্ষীনধারায় বয়ে চলেছে বড়াল।
শুষ্ক মৌসুমে বড়াল
নন্দনগাছি

নন্দনগাছি

২০০৯ সালে বড়ালের উৎস মুখের কিছু অংশ খনন করা হয়। তবে সেখানে আবার পলি জমতে শুরু করেছে। তবে ২০১৬ সালে উৎস মুখ থেকে স্লুইচ গেট পর্যন্ত আবার আরেক দফা খনন করা হয়। এই বছর পানি বৃদ্ধির লক্ষ্যে আরো খনন করা হযেছে। পাশে রোপন করা হয়েছে চারঘাটের ঐতিহ্য খয়েরের গাছ। তবে স্লুইচ গেট আবদ্ধ রেখে পানি প্রবাহ বৃদ্ধি করা সম্ভব না। সময় এসেছে স্লুইচ গেট খুলে বড়ালের স্বাভাবিক প্রবাহ নিশ্চিত করা।

বড়ালের প্রবাহ পথ পরিবর্তন;বড়াল আপার লোয়ার সমস্যা/মরা বড়াল সমস্যাঃ
বড়ালের মোট প্রবাহ পথের ৫৫ কিলোমিটার এখন মৃত। এই অংশ এখন মরা বড়াল নামে পরিচিত। উল্লেখ্য বিভিন্ন সময় ঘটে যাওয়া ভূমিকম্পে ও বন্যায় পদ্মার শাখা নদী সমূহ বারবার ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। ১৮২১ সালের প্রবল বন্যায় নারদ আর বড়াল ক্ষতি গ্রস্থ হয়। কিন্তু বড়ালের সংস্কার কজ করার কারণে বড়ালের প্রবাহ ঠিক থাকে আর নারদ মরে যেতে থাকে। বড়ালের প্রধান শাখা নদী ছিল নন্দকুঁজা। বাগাতিপাড়ার আটঘরিয়া নামক স্থানের নন্দকুজা গ্রামে এর উৎপত্তি। ১৮৯৭ সালে রাজশাহী অঞ্চলে এক ভয়াবহ ভূমিকম্পে বড়ালের তলদেশ উঁচু হয়ে যায়। সকাল বেলা উঠে সবাই দেখতে পায় নন্দকুঁজাতে অনেক পানি আর আর মুর বড়ালে পানি প্রবাহ কমে গেছে। এরপর থেকে নন্দকুজা বড় নদীতে পরিণত হয়। তখন থেকেই বড়ালের মুল প্রবাহ নন্দকুঁজা দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এটাকে নদী গবেষকদের অনেকে বড়াল আপার নদী বলে থাকেন। নন্দকুঁজা আত্রইয়ের সাথে মিশেছে নাটোরের গুরুদাসপুর উপজেলার নাজিরপুর ইউনিয়নে। চারঘাট থেকে গুরুদাসপুরের নাজিরপুর পর্যন্ত নদীকে বলা হচ্ছে ‘বড়াল আপার’ নদী । পরে মিলিত ধারা আত্রাই নাম নিয়ে অগ্রসর হয়ে পাবনার চাটমোহরে এসে গুমানীর জন্ম দেয়। পরে গুমানী অনেক গুলি জলধারা একত্রিত করে আবার বড়ালে পতিত হয়। এখান থেকে  বড়াল লোয়ার নদী শুরু । পরে বড়ালে পতিত হয়েছে করতোয়া সহ আরো কিছু নদী। বড়ালের এই অংশ এখনো বেশ প্রশস্ত এবং এটি এই অঞ্চলের উল্লেখযোগ্য নদী। অর্থাৎ বড়ালের প্রথম ও শেষের অংশ সচল তবে মাঝের অংশ মরা নদতে পরিণত হয়েছে। এই অংশ মরা বড়াল হিসেবে পরিচিত। পানি উন্নয়ন বোর্ডের নদীর তালিকায় নন্দকুঁজা বলে কোন নদীর নাম নাই। বড়াল আপার আর বড়াল লোয়ার নামে দুইটি নদীর কথা তারা উল্লেখ করেছেন; যদিও নদী কিন্তু একটাই। মূল বড়াল প্রাকৃতিক কারণে ক্ষতিগ্রস্থ হলেও তার অস্তিত্ব বজায় ছিল অনেক কাল। বিগত ৫০-৬০ বছর আগেও বড়াই গ্রামে বড়াল নদীতে বড় বড় নৌকা চলেছে। পাওয়া গেছে বড় বড় বাঘাইড় সহ অনান্য মাছ। তবে দয়ারামপুরের অদূরে আটঘরিয়া নামক স্থানে নন্দকুঁজার উৎপত্তি মুখের খানিক দুরে মুল বড়ালে আরেকটি স্লুেইচ গেট নির্মাণ করা হয়। আর এভাবেই মৃত্য ঘটে মূল বড়ালের। তারপর থেকে বড়ালে আর পানি যাচ্ছে না। নন্দকুঁজা থেকে ওয়ালিয়া বাজার পর্যন্ত বড়ালের কোন অস্তিত্ব নাই বললেই চলে। বড়াই গ্রাম থেকে কিছুটা নদীর বৈশিষ্ট্য ধারণ করছে বড়াল।

বড়ালের উৎস মুখে মাছ ধরায় ব্যস্ত  এক জেলে


বড়াল সমস্যা ও এর সমাধানঃ বড়াল ছিল চলন বিলেন নিষ্কাশনকারী একমাত্র নদী। চলন বিলের মাছের একটা বড় অংশ আসত বড়ালের মাধ্যমে। বড়ালে পদ্মার পানি সরবরাহ নিশ্চিত করা গেলে চলন বিলের মাছের উৎপাদন দ্বিগুন করা সম্ভব হবে। ফারাক্কা বাঁধের কারণে বড়ালের পানি প্রবাহ কমেছে বটে তবে অপরিকল্পিত জলকপাট বড়ালের মৃত্য নিশ্টিত করেছে। উৎস মুখ চারঘাটের জলকপাট ছাড়াও দয়ারামপুর, আটঘরিয়া, চাটমোহরে একাধিক জলকপাট নির্মাণ করা হয়েছে। চাটমোহরে একাধিক ক্রসড্রাম নির্মাণ করে বড়ালকে পুকুরে পরিণত করা হয়েছে। বড়ালে পানি আছে কিন্তু প্রবাহ নেই। শুধু চারঘাটেই নির্মাণ করা হয়েছে একাধিক অপরিকল্পিত ব্রিজ।
সম্প্রতি বড়ালকে সচল করার দাবিতে বড়ালের পাড়ে ২২০ কিরোমিটার অংশে মানব বন্ধন করা হয়েছে। হাইকোর্ট বড়ালের সব প্রতিবন্ধকতা দূর করে বড়ালকে সচল করার নির্দেশ দিয়েছেন। চারঘাটরে সাংসদ পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী জনাব শাহরিয়ার আলম সহ আরো কয়েকজন এমপি সংসদে বড়ালকে বাঁচাতে সরকারকে পদক্ষেপ নিতে বলেছেন। বস্তুত জলকপাট না খুললে বড়ালকে বাঁচানো সম্বব হবে না। আবার মরা বড়ালের পুরো অংশই খনন করা দরকার। আসলে বড়ালের উজানের সাথে মোহনার বর্তমানে কোন যোগ নাই। বড়ালের সমস্ত পানি আটঘরিয়া থেকে নন্দকুঁজাতে চলে যাচ্ছে। বড়াই গ্রামে মির্জা মাহমুদ খালটি সংস্কার করলে মরা বড়ালের এই অংশে আবার পানি প্রবাহ ফিরে আসবে। বড়ালকে বাঁচাতে হলে চারঘাটের ও আটঘরিয়ার স্লুইচ গেট খুলে দিতে হবে। এতে পানি প্রবাহ বৃদ্ধি পাবে আর তা দিয়ে নন্দকুঁজা ও বড়াল দুই নদীই পানি পাবে। ভরাট হওয়া মরা বড়াল খনন করা এখন সময়ের দাবি। পাশাপাশি পাবনা জেলার ভাঙ্গুরা ও চাটমোহর উপজেলায় নদীর ওপর যেসব বাঁধ দেওয়া হয়েছে, সেগুলাও অপসারণ করতে হবে। তাহলেই আবার বড়াল নতুন করে প্রাণ ফিরে পাবে। তবে নদী দেশে খননের নামে নদীকে গিনিপিগ করা প্রয়াস চলে আসছে। এভোবে খনন করা হলে বড়ালের মৃত্যু আর আটকানো যানে না।
 Charghat Students' Welfare Associationবড়াল নদ
ব্লগ লিখেছেনঃ
মোঃ আরিফুল ইসলাম অভি
অর্থনীতি বিভাগ; ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
কৃতজ্ঞতা প্রকাশঃ
বড়াল নদের ইতিকথা- মাহাবুব সিদ্দিকী
রাজশাহীর ইতিহাস-কাজী মোঃ মিছের

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

চারঘাটের নদ-নদী, ১ম পর্বঃ গঙ্গা/পদ্মা নদী (Ganges/Padma River)

বাংলাদেশ পুলিশ একাডেমী/একাডেমি, সারদা (Bangladesh Police Academy)

সরদহ সরকারী/সরকারি পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় (Sardah Govt. Pilot High School)