সরদহ সরকারী/সরকারি পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় (Sardah Govt. Pilot High School)



সরদহ সরকারি পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়,  ১৯১৬- 

চারঘাট উপজেলার একমাত্র সরকারি স্কুল হল সরদহ সরকারী পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়। এটি উত্তর বঙ্গের অন্যমত বিদ্যাপীঠ। এই বিদ্যালয়ের হাজার হাজার প্রাক্তন শিক্ষার্থী দেশের ভেতরে ও বাইরে সফলতার সাথে কর্মক্ষেত্রে কাজ করে যাচ্ছে। এটি সারদা বাজারের নিকটে, পুলিশ একাডেমীর কোল ঘেঁষে গড়ে উঠেছে। স্কুলের শুরুর গল্পটা একটু ভিন্ন। ১৯১৬ সালের ১৪ই নভেম্বর পুলিশ ট্রেনিং সেন্টারের অধ্যক্ষ মে. চামনী প্রতিষ্ঠানের কর্মমর্তা-কর্মচারীদের ছেলে-মেয়েদের জন্য সরদহ এম.ই. জুনিযর নামে একটি বিদ্যালয় নির্মাণ করেন। বর্তমান বিদ্যালয় ভবনের দক্ষিণ কোণে, মাঠের শেষ প্রান্তে স্কুলের একটি লাল বিল্ডিং তৈরি করা হয়েছিল। ১৯৮৮ সালে পুরাতন ভবনটি পুলিশ একাডেমী গনপূর্ত মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে ডাকে তুলে বিক্রি করে দেয়। সেটিই ছিল আজকের সরদহ সরকারী পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়। এই সময় স্কুলের প্রুতিষ্ঠাকালীন ফলকটি ভেঙ্গে/অপসারণ করা হয়। আর এভাবেই স্কুলের প্রতিষ্ঠাকাল নিয়ে বিভ্রান্তি তৈরি হয়। প্রতিষ্ঠার পর পুলিশ ট্রেনিং সেন্টারের অধ্যক্ষ পদাধিকার বলে স্কুল পরিচালনা কমিটির সভাপতি ছিলেন। সম্প্রতি প্রতিষ্ঠাকালীন সময়ের নাম ফলকটি স্কুল কর্তৃপক্ষ পুন:প্রতিষ্ঠা করেন। ফলকটি সরদহ বাজারের বিশিষ্ট ব্যবসায়ী জনাব আমিনুল ইসলাম টগরের কাছ থেকে সংগ্রহ করেন মুক্তারপুর নিবাসী মোঃ মোজাম্মেল হোসেন। এদিকে চাহিদার কথা চিন্তা করে ১৯২৭ সালে এটিকে উচ্চ বিদ্যালয়ে রূপান্তর করা হয়। ১৯২৯ সালে এটি শিক্ষাবোর্ডের অনুমোদন লাভ করে। ১৯৩১ সালে প্রথমবারের মত অত্র বিদ্যালয় থেকে ৫ জন শিক্ষার্থী ম্যাট্রিক পরীক্ষায় অংশ নেয় এবং সবাই কৃতকার্য হয়। তাদের মধ্যে দুইজন প্রথম বিভাগ অর্জন করেন। কঠোর নিয়ম-শৃঙ্খলার কারণে স্কুলটি খুব অল্প সময়ে সবার নিকট পরিচিতি পায়। ১৯৬২ সালের ২৬ ডিসেম্বর পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট ফিল্ড মার্শাল আইয়ুব খান বিদ্যালয়টিকে বর্তমান স্থানে স্থানান্তর করেন। সেই বছর ফোর্ট ফাউন্ডেশনের উদ্দ্যোগে পূর্ব পাকিস্থানের ৫টি স্কুল পাইলট স্কীমে আনা হয়। তার মধ্যে এই স্কুলটির নামও আসে। তখন থেকেই স্কুলের নামের সাথে পাইলট নামটি জড়িত হয়ে যায়। মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় মুক্তি সেনারা আইয়ুব খানের উদ্বোধনকৃত ফলকটি ধ্বংস করে ফেলেন।  ১৯৭৬ সালে তৎকালীন রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান পুলিশ একাডেমী পরিদর্শন কালে স্কুল পরিদর্শনে আসেন। তিনি জনাব মোঃ রিযাজ উদ্দিনকে স্কুলের প্রধান শিক্ষক হিসেবে দেখতে পান। উল্লেখ্য তিনি এর আগে  জিয়াউর রহমানের পঠিত বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করেছেন। রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান তাঁর বাল্য কালের বিদ্যালয়ের শিক্ষকের কাছে তাঁর একান্ত কোন চাওয়ার কথা জানতে চান। তিনি রাষ্ট্রপতিকে স্কুলটি সরকারী করে দিতে বলেন। অবশেষে রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান বিদ্যালয়টিকে জাতীয়করণের প্রতিশ্রুতি দেন। অবশ্য জাতীয়করণের ক্ষেত্রে সারদা পুলিশ একাডেমীরও যথেষ্ট অবদান ছিল। পুলিশ অফিসারগণ এই এলাকায় একটি সরকারি বিদ্যালয় স্থাপনের জন্য ততপর ছিলেন। অবশেষে  রাষ্ট্রপতির প্রতিশ্রতিতে ১৯৮১ সালের ১ জানুয়ারী থেকে স্কুলটি জাতীয়করণ করা হয়।
তৃতীয় শ্রেণী থেকে দশম শ্রেণী পর্যন্ত চলছে স্কুলের কার্যক্রম। ষষ্ঠ শ্রেণী থেকে দশম শ্রেণী থেকে প্রতিটি ক্লাসে দুটি করে শাখা চালু আছে। তৃতীয়, ষষ্ঠ ও নবম শ্রেণীতে পরীক্ষার মাধ্যমে ভর্তি হওয়ার সুযোগ রয়েছে। সীমিত সংখ্যক ছাত্র-ছাত্রী দ্বারা পরিচালিত হয়ে আসছে প্রতিষ্টানটি। যেকোন পাবলিক পরীক্ষায় কৃতিত্বের সাথে উত্তীর্ণ হচ্ছে এই স্কুলের শিক্ষর্থীরা। চারঘাটের অন্য যেকোন স্কুলের চাইতে ফলাফল সহ অন্যান্য বিষয়ে এগিয়ে আছে সরদহ সরকারী পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়। স্কুলটি পাইলট স্কুল নামে এলাকায় সর্বাধিক পরিচিত। স্কুলের প্রথম প্রধান শিক্ষক ছিলেন বিনয় ভূষণ আর বর্তমান প্রধান শিক্ষক হলেন জনাব মোঃ আনোয়ারুল ইসলাম। 


;

সরকারী হওয়ার পর থেকে প্রধান শিক্ষকগণঃ
১. এম শাহ্জালাল (ভারপ্রাপ্ত) ; ১. ১. ১৯৮১ - ২৯. ১০. ১৯৮৩
২. মুঃ ছোলায়মান আলী দেওয়ান; ৩০. ১০. ১৯৮৩ - ২১. ১১. ১৯৮৫
৩. মুহাঃ আব্দুল সাত্তার মিয়া; ২৫. ১. ১৯৮৬ - ২. ৯. ১৯৮৭
৪. মুহাঃ আব্দুল জাব্বার; ৩. ৯. ১৯৮৭ - ৩১. ১০. ১৯৮৭
৫. মোঃ শাহ জামাল আলি; ৬. ১২. ১৯৮৭ - ২১. ১০. ১৯৮৯
৬. এম. শাহ্ জালাল; ৬. ১. ১৯৯০ - ৩০. ১. ১৯৯৩
৭. অশ্বিণী কুমার সাহা; ১৬. ১. ১৯৯৩ - ২৩. ৮. ১৯৯৪
৮. মোঃ বজলার রহমান; ২৪. ৮. ১৯৯৪ - ৩০. ১০. ১৯৯৬
৯. মোঃ আবুল কাসেম; ৪. ৬. ১৯৯৮ - ৬. ১১. ২০০০
১০. মোঃ আবুল ফজল (ভারপ্রাপ্ত)
১১. মোঃ মোস্তাক হাবিব; ৬. ১১. ২০০১ - ১১. ১২. ২০০৩
১২. মোসাঃ সাইদা বেগম(ভারপ্রাপ্ত)
১৩. মাওঃ মুহাঃ আব্দুর রশিদ মিয়া;
১৪. মোসাঃ সাইদা বেগম (ভারপ্রাপ্ত)
১৫. মোঃ আনোয়ারুল ইসলাম- বর্তমান









সম্প্রতি ২০১৫ সালের ৩ জুলাই ঢাকায় স্কুলের প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহনে একটি ইফতার মাহফিল অনুষ্ঠীত হয়।
sgphs Esf (sardah Govt. Pilot High School Ex-Students’ Forum)-এর ব্যানারে অনুষ্ঠানটি সুসম্পন্ন হয়। এরপর ২৭ সেপ্টম্বর ২০১৫, প্রায় এক হাজার প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের নিয়ে স্কুল প্রাঙ্গণে একটি পুনর্মিলনীর আযোজন করা হয়। অনুষ্ঠানের আয়োজন করে SPESA (Sardah Pilot Ex-Students’ Association).

আরো দেখুন:
সরদহ মহাবিদ্যালয়
রাজশাহী ক্যাডেট কলেজ
সারদা পুলিশ একাডেমি
প্রাচীন চারঘােটের ঘাট সমূহ
চারঘাটের প্রাকৃতিক দৃশ্যের ছবি সমূহ

Charghat Students' Welfare Association
ব্লগ লিখেছেনঃ মোঃ আরিফুল ইসলাম অভি
র্থনীাত বিভাগ; ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
# নিরিবিলি 
তথ্য সূত্রঃ
সাময়িকি দীপশিখা-২০০৭
সাময়িকি পল্লবী-২০০০  

মন্তব্যসমূহ

  1. onek miss korci eo school ke.. abar jeno student hoye fire jete isse hoi

    উত্তরমুছুন
  2. আপনাকে ধন্যবাদ..........আমরা সবাই আমাদের প্রাণ প্রিয় বিদ্যালয়কে মিস করি।

    উত্তরমুছুন
  3. ছষ্ট শ্রেণি পরীহ্ম হবে কি

    উত্তরমুছুন
  4. বর্তমানে চারঘাট উপজেলার শিক্ষার ভবিষ্যত প্রজন্ম ও জনসাধারনের কথা বিবেচনা করে আরো বেশি সুযোগ প্রদানের জন্য আরো একটি শিফট চালু করার ব্যবস্থা করলে অত্র এলাকার ভবিষ্যত প্রজন্ম ও শিক্ষার জন্য ভালো হতো । কতৃপক্ষের সুদৃষ্টি কামনা করছি। -মনিমুল ইসলাম ,চারঘাট।

    উত্তরমুছুন

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

চারঘাটের নদ-নদী, ১ম পর্বঃ গঙ্গা/পদ্মা নদী (Ganges/Padma River)

বাংলাদেশ পুলিশ একাডেমী/একাডেমি, সারদা (Bangladesh Police Academy)