বাংলাদেশ পুলিশ একাডেমী/একাডেমি, সারদা (Bangladesh Police Academy)
বাংলাদেশ পুলিশ একাডেমী, সারদাঃ বঙ্গ ভঙ্গের পর বাংরা আর আসাম প্রদেশের জন্য একটি পৃথক পুলিশ ট্রেনিং সেন্টারের প্রয়োজন দেখা দেয়। প্রদেশের রাজধানীর সাথে কলকাতার যোগাযোগ ব্যবস্থা ভাল ছিল না বলে ঢাকায় সেটি নির্মাণ কারার পরিকল্পনা বাদ দেওয়া হয়। মেজর চামনী স্থান নির্ধারণের জন্য নৌ পথে বিভিন্ন স্থান পরিদর্শন করেন। অবশেষে চারঘাটের স্টীমার ঘাটে এসে পৌছালে তিনি একানকার পরিবেশ দেখে মুগ্ধ হন। সারি সারি আম গাছ আর ডাচদের স্থাপত্য তাঁকে আকৃষ্ট করে। নীল ব্যবসায়ীরা এখানে তাদের ব্যবসার জন্য অনেক ভবন নির্মাণ করেছিল। ১৮৩৫ সাল থেকে এখানে রবার্ট ওয়াটসন এন্ড কোম্পানীর ব্যবসায়ীক দপ্তর ছিল। সব মিলিয়ে তাঁর রাজশাহ জেলা শহর থেকে ২০ মাইল দূরে অবস্থিত সারদা স্থানটিকে বেশ মনে ধরে। তিনি ব্রিটিশ সরকারের কাছে এখানে পুলিশ সেন্টার নির্মাণের সুপারিশ করেন। তখন ভারতের ভাইসরয় ছিলেন লর্ড হার্ডিঞ্জ। ১৯১০ সালে মেদীনিপুর এস্টেটের কাছ থেকে ব্রিটিশ সরকার ১৪২.৬৬ একর সম্পত্তি ২৫০০ টাকায় কিনে নেয়। ১৯১২ সালের জুরাই মাসে শুরু হয় একাডেমীর কাজ। মেজর চামনী ছিলেন প্রথম প্রিন্সিপ্যাল। ২০০ আসন বিশিষ্ট কুটিবাড়ি আকৃতির কাঠামোতে এটি প্রতিষ্ঠিত। এখানে আছে অধ্যক্ষের বাংলো এবং এসপি, অতিরিক্ত এসপি, এএসপি, নতুন প্রশিক্ষাণার্থী, মহিলা অফিসার, ইন্সপেক্টর, সাব ইন্সপেক্টর, সার্জেন্ট এবং প্রধান কন্সটেবল ও কন্সটেবল ও ভৃত্যদের জন্য আবাসিক ব্যবস্থা। এটি বাংলাদেশের একমাত্র পুলিশ একাডেমী। এখানে শিক্ষনবীশ পিএসসি হতে কন্সটেবল পর্যন্ত যাবতীয় পুলিশীবিদ্যা ও কলা কৌশণ শিক্ষা দেওয়া হয়। ১৯১৫ সালে ১২ জন সহকারী পুলিশ সুপার, ২ জন পুলিশ সুপার, ১২ জন সাব-ইন্সপেক্টর ও ৪০০ জন কন্সটেবল নিয়ে পুলিশ একাডেমীর যাত্রা শুরু। এখানকার বড়কুঠি শিক্ষানবীশ পুলিশ সুপারদের আবাস গৃহ। দুটি কুটি ড্রিল মাস্টারের জন্য এবং বাকি ছয়টি কুঠি কন্সটেবলের ব্যারাক, শ্রেণীকক্ষ, লাইব্রেরী, ক্লাব, অশ্বশাল প্রভৃতি কাজে ব্যবহৃত হচ্ছে। প্রয়োজনের কথা চিন্তা করে পরে আরো ভবন নির্মাণ করা হয়েছে। ছোট বাচ্চাদের জন্য আছে একটি স্কুল। ১৯৬২ সালে ফিল্ড মার্শাল ‘আইয়ুব খান’ সফর কালে নাম পরিবর্তন করে সারদা পুলিশ একাডেমী রাখেন। ২০০৭ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় আবার নাম পরিবর্তন করে রাখ হয় ‘বাংলাদেশ পুলিশ একাডেমী’। বর্তমান অধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন নাজিবুর রহমান। ২০১২ সালে একশ বছর পূর্তিতে মাননীয় প্রধান মন্ত্রী ‘শেখ হাসিনা’ উপস্থিত ছিলেন। চালু করা হয় বিশেষ ডাক টিকেট।
১৯৭১ সালে পুলিশ একাডেমীর অনেক সদস্য শহীদ হন। তাদের স্মরণে একাডেমীতে শহীদ মিনার নির্মিত হয়েছে। পুলিশ একাডেমীর আছে সুদ্রশ্য প্যারেড গ্রাউন্ড। আছে দর্শনীয় অনেক স্থান। এখানে শত বর্ষের অনেক কড়ই গাছ আছে। পাশ্ববর্তী গ্রাম থানাপাড়ায় ছিল শিশা বাগান। সারি সারি শিশা গাছের কারণে স্থানটি শিশা বাগান বলে পরিচিতি লাভ করেছিল। এখানে পুলিশ একাডেমীর আম বাগান আছে। প্রতি দুই বছর অন্তর সেগুলা লিজ দেওয়া হয়। সম্প্রতি থানাপাড়ায় ফায়ারিং রেঞ্জ তৈরি করা হয়। পদ্মার পাড়ে বেড়ানোর জন্য তৈরি করা হয়েছে সুন্দর রাস্তা। এখানে অনেকেই পিকনিকের জন্য আসে।
Charghat Students' Welfare Association
ব্লগ লিখেছেনঃ মোঃ আরিফুল ইসলাম অভি
কৃতজ্ঞতা প্রকাশঃ
রাজশাহীর ইতিহাস- কাজী মোঃ মিছের
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন