চারঘাটের খয়ের শিল্প
সরদহ রোড স্টেশনের কাছে এক খয়ের ব্যবসায়ী খয়েরের হাড়ি ট্রেনে তোলার প্রস্তুতি নিচ্ছে |
একটা সময় ছিল যখন খয়েরের প্রায় ৯০ ভাগ আসত চারঘাট থেকে। ১৯৫২ সালে মুন্সী নুরূল হক আর তাহের উদ্দিন প্রামাণিকের হাত ধরে চারঘাটে খয়েরের চাষ শুরু হয়। প্রায় ২ লক্ষাধিক মানুষ এক সময় এই পেশার সাথে জড়িত ছিল। চারঘাটের বাবুপাড়া আর গোপালপুরে এক সময় প্রায় ২০০ পরিবার খয়ের শিল্পের সাথে জড়িত ছিল। বর্তমানে এই সংখ্যা ১০-১২ তে নেমে এসেছে। ব্যবসায়ীরা জানান খয়ের গাছ প্রাকৃতিকভাবে বেড়ে উঠে,কেউ চাষ করে না।লাভজনক না হওয়ায় এর চাষ হয় না বললেই চলে। অবাধে গাছ কাটার ফলে এখন আর বড় গাছ তেমন একটা নজরে পড়ে না। আবার বিদেশ থেকে খয়ের রপ্তানি করায় এর উৎপাদন কমে গেছে। খয়ের গাছ দেখতে অনেকটা বাবলা গাছের মত। এর ফুল আবছা হলুদ রঙের হয়। খয়েরের গাছ বাবলা গাছের মত হলেও পাতা আর ফুল কিন্তু ভিন্ন। খয়ের গাছ উপযুক্ত হলে ভিতরের সার অংশটুকু টুকরা টুকরা করে কেটে হাড়িতে সিদ্ধ করে সেখান হইতে নির্যাস বা রস বের করে লোহা প্লেইন শীটের নির্মিত লম্বা কড়াইতে করে দীর্ঘক্ষণ জ্বাল দিতে হয়। ঠিক আখের গুড় বা খেজুরের গুড় যেভাবে তৈরী করা হয়। খয়ের একটি রাসায়নিক পদার্থ। এটি বিভিন্ন কাজে ব্যবহৃত হয়। আদি কাল থেকে বাঙ্গালী পানের সাথে খয়ের ব্যবহার করে আসছে। খয়ের বাংলাদেশের সব স্থানে চাষ হয় না। খয়ের চাষের জন্য চারঘাটের মাটি বেশ উপযুক্ত। প্রতি বুধবার চারঘাটে খয়েরের হাট বসে। ভোর ভোর থাকতেই শুরু হয় বেচাকেনা। সকাল সাতটার মধ্যেই হাট শেষ হয়ে যায়। এখান থেকে খয়ের চলে যায় দেশের বিভিন্ন প্রান্তে। বাজারে সব সময় পিউর খয়ের উঠে না। উত্তর বঙ্গের ব্যবসায়ীরা সরাসরি বাড়ি থেকে নিয়ে গিয়ে ওজন দিয়ে তারপর নিয়ে চলে যায় রংপুর, দিনাজপুর সহ উত্তরাঞ্চলে।
আরো দেখুনঃ চারঘাটের বড়াল নদী
রাজশাহীর পদ্মা নদী
ছবিতে চারঘাট
ছবির ডান পাশের জন হলেন মুন্সী আব্দুর রব যাঁর হাত ধরে চারঘাটে খয়ের শিল্পের প্রসার ঘটে। |
ব্লগ লিখেছেনঃ
মোঃ আরিফুল ইসলাম অভি
কৃতজ্ঞতা প্রকাশঃ
মরহুম সাংবাদিক শহীদুল ইসলাম শহীদ
মনিরুল ইসলাম; দপ্তর সম্পাদক, বৃহত্তর চারঘাট ছাত্র কল্যাণ পরিষদ।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন