পুরাতন নন্দনগাছীর চৈত্র সংক্রান্তির মেলা


চারঘাটের অনার্য সম্প্রদায়ের যে সংস্কৃতিটি এখনো স্বগর্বে টিকে আছে সেটা হল চৈত্র সংক্রান্তির মেলা। ঠিক কত বছর ধরে এই মেলার প্রচলন তার কোন তথ্য পাওয়া মুশকিল। তবে চারঘাটের বড়াল পাড়ের এই মেলাটি উপমহাদেশের সবচেয়ে বড় চৈত্র সংক্রান্তির মেলা ছিল বলে জানা যায়। চারঘাট উপজেলার নিমপাড়া ইউনিয়নের জোত কার্তিক বিএন স্কুল মাঠে প্রতিবছর পহেলা বৈশাখে েরর আয়োজন করা হয়। আরো দু এক জায়গায় এর আয়োজন হলেও এটাই মূল চৈত্র সংক্রান্তির মেলা। বেশ জাঁক জমক ভাবেই আয়োজন করা হয় এই মেলার। এই মেলার আয়োজন করে থাকে স্থানীয় কুটিপাড়ার বাসিন্দারা,যারা নাকি সবাই অনার্য। তারা মূলত তুরি সম্প্রদায়ের। এই মেলা পরিচালনা কমিটির সভাপতি ষষ্ঠী সর্দার আর সাধারণ সম্পাদক বিশ্বনাথ। প্রতি বছর তারা চাঁদা তুলে মেলা আর পূজার আয়োজন করে থাকে। টাকার পরিমাণ দাড়ায় ৫০০০/৬০০০ টাকা। কোন অনুদান পাওয়া যায় না বলে মেলা কমিটির সভাপতি আমাদের জানান। মেলার মূল আকর্ষন হল চড়ক গাছে সন্ন্যাসীর শলাকা বিদ্ধ ঘূর্ণন। সন্ন্যাসীরা তিন দিন আগে থেকে নিরামিষ খেয়ে থাকে। বিভিন্ন প্রকার ফল- মূল তাদের খাবারের তালিকায় স্থান করে নেয়। চড়ক পূজার আগের দিন




থেকেই শিব পূজার আয়োজন করা হয়ে থাকে। চারঘাটে একটি মাত্র চড়ক গাছ আছে। প্রতি বছর পূজার আগে খয়ের কাঠের এই চড়ক হাইফতের দহ থেকে তোলা হয়। আবার পূজা শেষে সেখানে রেখে দেওয়া হয়। আগে এই চড়ক কাঠটি বড়ালে রাখা হত। কিন্তু বর্তমানে বড়ালে শুষ্ক মৌসুমে পানি না থাকায় গাছের গুড়ি হাইফত সরকারের দহে রাখা হয়। জৈনক তালুকদার শ্রেণীর লোক চড়ক গাছটি বড়ালে রাখা হয়। পরের বছর পুরোহিত পূজার আগ দিয়ে শিবের আরাধনা করলে নদীর কোন অংশে ভেসে উঠত চড়ক গাছটি। পূজা পরিচালনা করেন বিজোরের গ্যানা স্যান্ডাল। তিনি ব্রাহ্মণ শ্রেণীর। চৈত্র সংক্রান্তির মেলা মূলত অনার্য দেবতা শিবের গাজন পূজা। অনার্যদের মাঝে এই পূজার রীতি বহু পুরনো হলেও আর্য শ্রেণীর হিন্দুরা এই পূজা গ্রহণ করে১৪৮৫ সালে। সুরানান্দ


নামে এক হিন্দু রাজা এই পূজার প্রচলন করেন। এই পূজার বিশেষ অংঙ্গের নাম নীলপূজা। পূজার আগের দিন চড়ক গাছটি ধুয়ে মুছে পরিষ্কার করা হয়। এতে জল ভরা একটি পাত্রে শিবের প্রতীক শিবলিঙ্গ রাখা হয়। পতিত ব্রাহ্মণ এই পূজার পুরোহিতের দায়িত্ব পালন করেন। পূজার বিশেষ বিশেষ অঙ্গ হলো কুমিরের পূজা,জলন্ত অঙ্গারের ওপর দিয়ে হাটা,কাটা ছুরির ওপর লাফানো,বিষফোড়া, শিবের বিয়ে,চড়ক গাছে দোলা,হাজরা পূজা। পূজা উপলক্ষে অনেক মানুষ মানত করে। তারা সন্ন্যাসীর দিকে তাদের মানত করা দ্রব্য ছুড়ে ফেলে। অনেক মুসলিম সম্প্রদায়ের লোকও মানত করে থাকে। অনার্য পরিবারের অনেকেই তাদের সন্তানদের সন্ন্যাসী করার মানত করে থাকে। সব মিলিয়ে অনার্য সম্প্রদায়ের এই মেলা একটি সর্বজনীন রুপ ধারণ করেছে।


ব্লগ লিখেছেনঃ
মোঃ আরিফুল ইসলাম অভি
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়


মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

চারঘাটের নদ-নদী, ১ম পর্বঃ গঙ্গা/পদ্মা নদী (Ganges/Padma River)

বাংলাদেশ পুলিশ একাডেমী/একাডেমি, সারদা (Bangladesh Police Academy)

সরদহ সরকারী/সরকারি পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় (Sardah Govt. Pilot High School)