চারঘাটের নদ-নদী, ৩য় পর্বঃ নারদ নদ/ নারদ নদী (Narad River)
নারোদ নদঃ
উৎসঃ পদ্মা (গঙ্গা) নদী
মোহনাঃ আত্রাই নদী
নারদ / নারন্দম পদ্মার অন্যতম শাখা নদী। পূর্বে পদ্মা/মহানন্দার প্রবাহ নারোদ দিয়ে পুঁঠিয়া, নাটোর,চাপিলা হয়ে ঢাকা; অতপর সাগরে পতিত হত। চারঘাটের শাহপুরে নারদের উৎস মুখ। রাজশাহীর কালেক্টর রেনেলের নকশায় দেখা যায় নারোদ পাবনায় বড়ালের সাথে মিলিত হয়ে ঢাকার জাফরগঞ্জ (মানিকগঞ্জ) পর্যন্ত প্রবাহিত। পরে এই ধারাটি ধলেশ্বরীর ভিতর দিয়ে মেঘনা খাড়িতে গিয়ে মিশেছে। অতপর চট্টগ্রামের মধ্য দিয়ে বঙ্গপোসাগরে পতিত হয়েছে। আজকের বুড়িগঙ্গা পদ্মার সেই প্রাচীন খাত। রেনেল নারদকে পদ্মার প্রাচীন খাত বলেছেন। কোন এক সময় গঙ্গা চলন বিলের মাঝ দিয়ে প্রবাহিত হত বলে প্রায় সব নদী গবেষক ও ঐতিহাসিক এক হয়েছেন। জেমস রেনেল নারদকেই গঙ্গার চলন বিলগামী প্রাচীন খাত হিসেবে অবহিত করেছেন। পূর্বে চলন বিল এলাকায় আত্রাই, করতোয়া, হুরাসাগর সহ উত্তর বঙ্গের অনেক নদী গঙ্গায় এসে মিশত। এই সব নদী এখন বড়াল অথবা নারদের সাথে এসে মিশছে। সেই হিসাবে নারদ বড়ালের চেয়েও প্রাচীন কারন ১৬৬০ সালে ব্রেকেনের ম্যাপে বড়ালকেই গঙ্গা হিসেবে দেখানো হত।
নারদ এক সময় খরস্রোতা নদী ছিল। নারদের মোট তিনটি প্রবাহ। প্রথম প্রবাহটি শাহপুর থেকে কাটাখালী, কাপাসিয়া, জামিরা হলিদাগাছী, মৌগাছী, শিবপুর, তাঁতারপুর, বিড়ালদহ, ভাড়রা হয়ে ক্রান্দা পর্যন্ত গিয়ে বালাদিয়ার বাজারের পাশ দিয়ে প্রবাহিত হয়ে ঝলমলিয়ার দিকে প্রবাহিত হয়েছে। ঝলমলিয়া বাজারের কাছে নারদ মুসা খান নদের সাথে মিশেছে। এরপর নারদ নাটোরের দিকে প্রবাহিত। নাটোর শহরের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়ে নারদ গুরুদাসপুরের তেমুখ গ্রামে গিয়ে আত্রইয়ের সাথে মিশেছে। পথিমধ্যে নারদ বড়ালের প্রধান শাখা নদী নন্দকুজার পানি বক্ষে ধারণ করেছে। ১৯৯-৯৮সালে পানি উন্নয়ন বোর্ড সিমেন্টের ব্লক দিয়ে নারদের উৎস মুখ চিরতরে বন্ধ করে দেয়। রাজশাহী জেলায় মোট ৩৫ কিমি নারদের প্রবাহ ছিল। সন্ধ্যা আর সুন্দর নারদের দুটি শাখা নদী। উল্লেখ্য পূর্বে রাজশাহী সদর ছিল আজকের নাটেরা সদর। রাজশাহীর জমিদার রাণী ভবানি নারদ হয়ে কলকাতা যাত্রা করতেন। ১৮২১ সালে বন্যায় নারদের উৎস মুখে বালু জমে। নাব্যতা সঙ্কটে পরে নারদ। রাজধানী কলকাতার সাথে রাজশাহীর যোগাযোগ বিঘ্নিত হতে থাকে। ব্রিটিশ সরকার তখন এর বিকল্প খুঁজতে থাকে। অবশেষে ১৮২৫ সালে ‘বোয়ালিয়াকে’ রাজশাহী সদর ঘোষণা করে সরকার। উল্লেখ্য সেই সময় যদি সরকার নারদের প্রবাহ ফেরানোর চেষ্টা করত তাহলে নারদের প্রবাহ ঠিক থাকত। ১৮২৯ সালে নাটোরকে মহাকুমার মর্যাদা দেওয়া হয়। চারঘাটের বালাদিযাড় বাজারের পাশে প্রবাহিত এক সময়ের খরস্রোতা নারদ নদ। পুনঃখননের ফলে আবারো পানি ধারণের উপযোগী হয়েছে নারদ।
Charghat Students' Welfare Association
কিছুদিন পূর্বেও চারঘাটে নারদের কোন অস্তিত্ব ছিল না। সম্প্রতি বরেন্দ্র উন্নয়ন কতৃপক্ষ উৎস মুখ থেকে মুসা খান নদ পর্যন্ত ৩০ কিমি খনন করে। বর্তমানে নদীর প্রবাহ দৃশ্যমান। বর্ষকালে নদীর পানি ধারণ করে শুষ্ক মৌসুমে তা দিয়ে কৃষি কাজ পরিচালনা করা হবে । তবে উৎস মুখ শাহপরের বদলে ইউসুফপুর থেকে ইনটেক ক্যানেলের ( বাপমারা খাল) মাধ্যমে পানি সরবরাহের ব্যবস্থা করা হয়েছে। নারদ আগের অবস্থায় না ফিরে পেলেও আরো একবার চারঘাটের মানচিত্রে জায়গা করে নিয়েছে। নতুন প্রজন্ম জানতে পারবে বিখ্যাত এই নদীর কথা। শলুয়ার দহ, বিড়াল দহ, ভেন্নার বিল, শলুয়ার বিল, ইত্যাদি নারোদের প্রাচীন খাত। নারোদের কাত পরিবর্তনের ফলে এসবের জন্ম হয়েছে।
বর্তমানে নারদ খনন করেও নদী বক্ষে পানি ধারণ করা সম্ভব হচ্ছে না। অপরিকল্পিত খনন আর দূর্নীতি এর প্রধান কারণ। বর্তমানে নারদ ঝলমলিয়া বাজারের নিকট মুসা খান নদের সাথে মিশেছে। মিলিত ধারা মুসা খান নদ নাম ধারণ করে প্রবাহিত হচ্ছে। নাটোরের কাফুরিয়া ইউনিয়েন থেকে মুসা খান থেকে নারোদের দ্বিতীয় ধারাটি বের হয়ে নাটোরের দিকে প্রবাহিত। আর মুসা খান আরো সামনে অগ্রসর হয়ে হোজার সাথে মিশে গদাই নাম ধারণ করে বারনাইয়ের সাথে গিয়ে মিশেছে। অথচ মুসা খান পূর্বে নারদ আর বড়ালের সংযোগ রক্ষাকারী খাল ছিল। ১৮৩৮ সালের বন্যায় মুসা খানের বিস্তৃতি ঘটে আর বেশ বড় নদীতে পরিণত হয়। মুসা খান নদীর মর্যাদা পাওয়ার আগে হোজা নারদে পতিত হত। তখন বারনাই নারদরে তুলনায় বেশ ছোট নদী ছিল। নারদ গুরুদাসপুরে দিয়ে ‘নন্দকুজা’র সাথে মিলিত হচ্ছে। নারদের ৩য় ধারাটি নন্দকুজা নামে প্রবাহিত হয়ে আত্রইয়ের সাথে মিশেছে। অথচ পূর্বে মিলিত ধারা নারদ নামে প্রবাহিত হত। নন্দকুজা তখন ছোট নদী ছিল। ১৮৯৭ সালে ভুমিকম্পে বড়োলের ভুমি উচুঁ হয়ে যাওয়ার কারণে বড়ালের মুল ধারা নন্দকুজার মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। তখন থেকে নন্দকুজা বড় নদী। আর ততদিনে নারদ ছোট নালায় পরিণত হয়েছে। বর্তমানে নারদ আর নন্দকুজার মিলিত ধারা নন্দকুজা নামে আত্রেইয়ের সাথে মিশছে।
নারদ পাড়ে সূর্যাস্তেরিএকটি মনোরম দৃশ্য। ছবিটি দিঘলকান্দি থেকে তোলা হয়েছে। ছবিঃ মোহাইমিনুল হক মিমুল।
বানেশ্বর ইউনিয়নের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে নারোদ নদী।
চারঘাটের নারদঃ আসলে নারদ মজে গেছে প্রায় ২০০ বছর আগে। ফলে চারঘাটের জীবন-যাত্রায় নারদের প্রভাব কেমন ছিল, সেটা বেরা আমাদের জন্য বেশ দুষ্কর। তারপরেও ইতিহাস থেকে কিছু তথ্য আমাদের কাছে এসে জমা হচ্ছে।
গঙ্গার প্রমত্তা শাখা নারদ ছিল তখনকার দিনে চলাচলের প্রধান মাধ্যম। নারদ বেয়ে কলকাতা ও পূর্বে মুর্শিদাবাদের লোকজন এই অঞ্চলে আসত। বছর ৭০-৮০ আগেও মৌগাছিতে একটা নৌঘাট ছিল বলে অনেক বৃদ্ধ বলে থাকেন। রানী ভবানি নারদ ধরে কলকাতা যেতেন। পথিমধ্যে ইউসুফপুরে গ্রামবাসীর মেরাতে তিনি মিলিত হতেন। সবার সাথে তিনি কুশল বিনিময় করতেন। নারদ মরে যাওয়ায় এই গুরুত্বপূর্ণ নৌপথটি নষ্ট হয়ে যায়। আবার অনেক জেলে পরিবার নিঃস্ব হয়ে যায়; কেউবা পেশা পরিবর্তন করে। নদী মরে যাওয়ার কারণে এই অঞ্চলে পানির লেয়ার অনেক কমে গেছে। নারদের সৃষ্ট বহু সংখ্যক দহ, বিল থেকে এলাকার মানুষ বেম উপকৃত হচ্ছে। উল্লেখ্য নারদের খাত পরিহার করে বড়াল দিয়ে গঙ্গা প্রবাহিত হওযার সময় অনেক বিলের সৃষ্টি হয়। আর বড়াল থেকে বর্তমান খাতে প্রবাহ কালে গঙ্গা আরো অনেক দহ, বিল, মোর্চার জন্ম দেয়। উল্লেখ্য বিল কিংবা দহ এমনি এমনি সৃষ্টি হয় না। নদীর খাত পরিবর্তনের সময় পুরাতন খাত বিল কিংবা দহে পরিণত হয়। বতৃমানে নারদের পানিতে কৃষকরা পাট জাগ দিচ্ছে। সারা বছর পানি রিজার্ভ করায় মাছ চাষেরও সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে।
ব্লগ লিখেছেনঃ মোঃ আরিফুল ইসলাম অভি
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
কৃতজ্ঞতা প্রকাশঃ
রাজশাহীর ইতিহাস; কাজী মোঃ মিছের
আমার পুঠিয়া
দৈনিক প্রথম আলো
মাহাবুব সিদ্দিকী
ঐতিহ্যের চারঘাট-ডাঃ আব্দুল মালেক
উৎসঃ পদ্মা (গঙ্গা) নদী
মোহনাঃ আত্রাই নদী
নারদ / নারন্দম পদ্মার অন্যতম শাখা নদী। পূর্বে পদ্মা/মহানন্দার প্রবাহ নারোদ দিয়ে পুঁঠিয়া, নাটোর,চাপিলা হয়ে ঢাকা; অতপর সাগরে পতিত হত। চারঘাটের শাহপুরে নারদের উৎস মুখ। রাজশাহীর কালেক্টর রেনেলের নকশায় দেখা যায় নারোদ পাবনায় বড়ালের সাথে মিলিত হয়ে ঢাকার জাফরগঞ্জ (মানিকগঞ্জ) পর্যন্ত প্রবাহিত। পরে এই ধারাটি ধলেশ্বরীর ভিতর দিয়ে মেঘনা খাড়িতে গিয়ে মিশেছে। অতপর চট্টগ্রামের মধ্য দিয়ে বঙ্গপোসাগরে পতিত হয়েছে। আজকের বুড়িগঙ্গা পদ্মার সেই প্রাচীন খাত। রেনেল নারদকে পদ্মার প্রাচীন খাত বলেছেন। কোন এক সময় গঙ্গা চলন বিলের মাঝ দিয়ে প্রবাহিত হত বলে প্রায় সব নদী গবেষক ও ঐতিহাসিক এক হয়েছেন। জেমস রেনেল নারদকেই গঙ্গার চলন বিলগামী প্রাচীন খাত হিসেবে অবহিত করেছেন। পূর্বে চলন বিল এলাকায় আত্রাই, করতোয়া, হুরাসাগর সহ উত্তর বঙ্গের অনেক নদী গঙ্গায় এসে মিশত। এই সব নদী এখন বড়াল অথবা নারদের সাথে এসে মিশছে। সেই হিসাবে নারদ বড়ালের চেয়েও প্রাচীন কারন ১৬৬০ সালে ব্রেকেনের ম্যাপে বড়ালকেই গঙ্গা হিসেবে দেখানো হত।
নারদ এক সময় খরস্রোতা নদী ছিল। নারদের মোট তিনটি প্রবাহ। প্রথম প্রবাহটি শাহপুর থেকে কাটাখালী, কাপাসিয়া, জামিরা হলিদাগাছী, মৌগাছী, শিবপুর, তাঁতারপুর, বিড়ালদহ, ভাড়রা হয়ে ক্রান্দা পর্যন্ত গিয়ে বালাদিয়ার বাজারের পাশ দিয়ে প্রবাহিত হয়ে ঝলমলিয়ার দিকে প্রবাহিত হয়েছে। ঝলমলিয়া বাজারের কাছে নারদ মুসা খান নদের সাথে মিশেছে। এরপর নারদ নাটোরের দিকে প্রবাহিত। নাটোর শহরের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়ে নারদ গুরুদাসপুরের তেমুখ গ্রামে গিয়ে আত্রইয়ের সাথে মিশেছে। পথিমধ্যে নারদ বড়ালের প্রধান শাখা নদী নন্দকুজার পানি বক্ষে ধারণ করেছে। ১৯৯-৯৮সালে পানি উন্নয়ন বোর্ড সিমেন্টের ব্লক দিয়ে নারদের উৎস মুখ চিরতরে বন্ধ করে দেয়। রাজশাহী জেলায় মোট ৩৫ কিমি নারদের প্রবাহ ছিল। সন্ধ্যা আর সুন্দর নারদের দুটি শাখা নদী। উল্লেখ্য পূর্বে রাজশাহী সদর ছিল আজকের নাটেরা সদর। রাজশাহীর জমিদার রাণী ভবানি নারদ হয়ে কলকাতা যাত্রা করতেন। ১৮২১ সালে বন্যায় নারদের উৎস মুখে বালু জমে। নাব্যতা সঙ্কটে পরে নারদ। রাজধানী কলকাতার সাথে রাজশাহীর যোগাযোগ বিঘ্নিত হতে থাকে। ব্রিটিশ সরকার তখন এর বিকল্প খুঁজতে থাকে। অবশেষে ১৮২৫ সালে ‘বোয়ালিয়াকে’ রাজশাহী সদর ঘোষণা করে সরকার। উল্লেখ্য সেই সময় যদি সরকার নারদের প্রবাহ ফেরানোর চেষ্টা করত তাহলে নারদের প্রবাহ ঠিক থাকত। ১৮২৯ সালে নাটোরকে মহাকুমার মর্যাদা দেওয়া হয়। চারঘাটের বালাদিযাড় বাজারের পাশে প্রবাহিত এক সময়ের খরস্রোতা নারদ নদ। পুনঃখননের ফলে আবারো পানি ধারণের উপযোগী হয়েছে নারদ।
বালাদিয়ার বাজারের পাশে নারদ |
Charghat Students' Welfare Association
কিছুদিন পূর্বেও চারঘাটে নারদের কোন অস্তিত্ব ছিল না। সম্প্রতি বরেন্দ্র উন্নয়ন কতৃপক্ষ উৎস মুখ থেকে মুসা খান নদ পর্যন্ত ৩০ কিমি খনন করে। বর্তমানে নদীর প্রবাহ দৃশ্যমান। বর্ষকালে নদীর পানি ধারণ করে শুষ্ক মৌসুমে তা দিয়ে কৃষি কাজ পরিচালনা করা হবে । তবে উৎস মুখ শাহপরের বদলে ইউসুফপুর থেকে ইনটেক ক্যানেলের ( বাপমারা খাল) মাধ্যমে পানি সরবরাহের ব্যবস্থা করা হয়েছে। নারদ আগের অবস্থায় না ফিরে পেলেও আরো একবার চারঘাটের মানচিত্রে জায়গা করে নিয়েছে। নতুন প্রজন্ম জানতে পারবে বিখ্যাত এই নদীর কথা। শলুয়ার দহ, বিড়াল দহ, ভেন্নার বিল, শলুয়ার বিল, ইত্যাদি নারোদের প্রাচীন খাত। নারোদের কাত পরিবর্তনের ফলে এসবের জন্ম হয়েছে।
বর্তমানে নারদ খনন করেও নদী বক্ষে পানি ধারণ করা সম্ভব হচ্ছে না। অপরিকল্পিত খনন আর দূর্নীতি এর প্রধান কারণ। বর্তমানে নারদ ঝলমলিয়া বাজারের নিকট মুসা খান নদের সাথে মিশেছে। মিলিত ধারা মুসা খান নদ নাম ধারণ করে প্রবাহিত হচ্ছে। নাটোরের কাফুরিয়া ইউনিয়েন থেকে মুসা খান থেকে নারোদের দ্বিতীয় ধারাটি বের হয়ে নাটোরের দিকে প্রবাহিত। আর মুসা খান আরো সামনে অগ্রসর হয়ে হোজার সাথে মিশে গদাই নাম ধারণ করে বারনাইয়ের সাথে গিয়ে মিশেছে। অথচ মুসা খান পূর্বে নারদ আর বড়ালের সংযোগ রক্ষাকারী খাল ছিল। ১৮৩৮ সালের বন্যায় মুসা খানের বিস্তৃতি ঘটে আর বেশ বড় নদীতে পরিণত হয়। মুসা খান নদীর মর্যাদা পাওয়ার আগে হোজা নারদে পতিত হত। তখন বারনাই নারদরে তুলনায় বেশ ছোট নদী ছিল। নারদ গুরুদাসপুরে দিয়ে ‘নন্দকুজা’র সাথে মিলিত হচ্ছে। নারদের ৩য় ধারাটি নন্দকুজা নামে প্রবাহিত হয়ে আত্রইয়ের সাথে মিশেছে। অথচ পূর্বে মিলিত ধারা নারদ নামে প্রবাহিত হত। নন্দকুজা তখন ছোট নদী ছিল। ১৮৯৭ সালে ভুমিকম্পে বড়োলের ভুমি উচুঁ হয়ে যাওয়ার কারণে বড়ালের মুল ধারা নন্দকুজার মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। তখন থেকে নন্দকুজা বড় নদী। আর ততদিনে নারদ ছোট নালায় পরিণত হয়েছে। বর্তমানে নারদ আর নন্দকুজার মিলিত ধারা নন্দকুজা নামে আত্রেইয়ের সাথে মিশছে।
নারদ পাড়ে সূর্যাস্তেরিএকটি মনোরম দৃশ্য। ছবিটি দিঘলকান্দি থেকে তোলা হয়েছে। ছবিঃ মোহাইমিনুল হক মিমুল।
দিঘলকান্দিতে নারোদের পাশ থেকে তোলা ছবি |
বানেশ্বর ইউনিয়নের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে নারোদ নদী।
চারঘাটের নারদঃ আসলে নারদ মজে গেছে প্রায় ২০০ বছর আগে। ফলে চারঘাটের জীবন-যাত্রায় নারদের প্রভাব কেমন ছিল, সেটা বেরা আমাদের জন্য বেশ দুষ্কর। তারপরেও ইতিহাস থেকে কিছু তথ্য আমাদের কাছে এসে জমা হচ্ছে।
গঙ্গার প্রমত্তা শাখা নারদ ছিল তখনকার দিনে চলাচলের প্রধান মাধ্যম। নারদ বেয়ে কলকাতা ও পূর্বে মুর্শিদাবাদের লোকজন এই অঞ্চলে আসত। বছর ৭০-৮০ আগেও মৌগাছিতে একটা নৌঘাট ছিল বলে অনেক বৃদ্ধ বলে থাকেন। রানী ভবানি নারদ ধরে কলকাতা যেতেন। পথিমধ্যে ইউসুফপুরে গ্রামবাসীর মেরাতে তিনি মিলিত হতেন। সবার সাথে তিনি কুশল বিনিময় করতেন। নারদ মরে যাওয়ায় এই গুরুত্বপূর্ণ নৌপথটি নষ্ট হয়ে যায়। আবার অনেক জেলে পরিবার নিঃস্ব হয়ে যায়; কেউবা পেশা পরিবর্তন করে। নদী মরে যাওয়ার কারণে এই অঞ্চলে পানির লেয়ার অনেক কমে গেছে। নারদের সৃষ্ট বহু সংখ্যক দহ, বিল থেকে এলাকার মানুষ বেম উপকৃত হচ্ছে। উল্লেখ্য নারদের খাত পরিহার করে বড়াল দিয়ে গঙ্গা প্রবাহিত হওযার সময় অনেক বিলের সৃষ্টি হয়। আর বড়াল থেকে বর্তমান খাতে প্রবাহ কালে গঙ্গা আরো অনেক দহ, বিল, মোর্চার জন্ম দেয়। উল্লেখ্য বিল কিংবা দহ এমনি এমনি সৃষ্টি হয় না। নদীর খাত পরিবর্তনের সময় পুরাতন খাত বিল কিংবা দহে পরিণত হয়। বতৃমানে নারদের পানিতে কৃষকরা পাট জাগ দিচ্ছে। সারা বছর পানি রিজার্ভ করায় মাছ চাষেরও সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে।
হলিদাগাছিতে পুনঃখনন করার পর নারোদ |
ব্লগ লিখেছেনঃ মোঃ আরিফুল ইসলাম অভি
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
কৃতজ্ঞতা প্রকাশঃ
রাজশাহীর ইতিহাস; কাজী মোঃ মিছের
আমার পুঠিয়া
দৈনিক প্রথম আলো
মাহাবুব সিদ্দিকী
ঐতিহ্যের চারঘাট-ডাঃ আব্দুল মালেক
নারদ নদীর উৎস মুখ আবার খুলে দেওয়ার জন্য জোর দাবি করছি।
উত্তরমুছুনঅনেক সুন্দর করে আমাদের বেশির নদীর ইতিহাস লিখেছেন । আমি মুগ্ধ হয়ে পড়লাম ।
উত্তরমুছুন